কোন মুসলিম ব্যক্তির মৃত্যুর পর যদি তার সম্পত্তি থেকে থাকে, অর্থাৎ যদি তিনি কোন সম্পত্তি রেখে মারা যান, তবে ঐ সম্পত্তি তার উত্তরাধিকারদের মধ্যে মুসলিম উত্তরাধিকার আইন বা ফারায়েজ অনুসারে বণ্টন করা হয়ে থাকে।
মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি কিভাবে ভাগ করতে হয়
কোন ব্যক্তির মৃত্যুর পর হয়তো অনেককেই রেখে যান কিন্তু এর মধ্যে সব উত্তরাধিকারী আসলে সমান অধিকার লাভ করে না, স্বাভাবিক ভাবেই কাছের উত্তরাধিকার এবং বংশের মানুষ যেমন বেচে থাকলেও একটু বেশী কাছে থাকেন এবং সব সময় সাহায্য সহযোগিতা করেন তেমনি মৃত্যুর পরও তারা বিশেষ মর্যাদা পান। তাই ফারায়েজ আইন অনুসারে সম্পত্তিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
সেই ভাগটা কিভাবে করবো তা আমরা নিচে দেখবো। তবে ফরায়েজের আগে অন্য কোন দায়-দাবী বা আদেশ-নির্দেশ থাকলে তা পালন করতে হবে।
বণ্টনের আগে যেসব বিষয় দেখতে হবে
উত্তরাধিকারদের মধ্যে মুসলিম ফরায়েজ ও দেশের আইন মতে সম্পত্তি বণ্টনের আগে দেখতে হবে যে মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি নিয়ে কোন দায়-দাবী বা আদেশ-নির্দেশ আছে কিনা। যদি থকে সেগুলো আগে পরিশোধ করে দায় মুক্ত হতে হবে। যেমন:
- সৎকারের খরচ: মৃত ব্যক্তির সৎকারে যেই খরচ হয় তা পরবর্তীতে মৃত ব্যক্তি সম্পত্তি থেকে প্রদান করতে হবে।
- কোন পাওনা: মৃত ব্যক্তি কারো কাছ থেকে ধার করলে বা আইন অনুসারে বা আদালতের অর্ডারের মাধ্যমে কেউ তার কাছে কোন টাকা পেলে তা প্রদান করতে হবে।
- দেনমোহর: স্ত্রীর দেনমোহর বাকি থাকলে তা পরিশোধ করতে হবে।
- দান / হেবা: মৃত ব্যক্তি জীবদ্দশায় কোন দান করে থাকলে তা প্রাপককে বুঝিয়ে দিতে হবে।
- ওসিয়ত (উইল): মৃত ব্যক্তি যদি কোন ওসিয়ত বা উইল করে থাকেন তবে তার ইচ্ছা অনুযায়ী সেই ওসিয়তের সম্পাদন করতে হবে, তবে এই উইল (সব দায় দেনা পরিশোধের পর) এক-তৃতীয়াংশের বেশী হতে পারবে না।
উপরোক্ত সকল বিষয় সমাধান করার পর যে সম্পত্তিটি থাকে তা তার উত্তরাধিকারদের মধ্যে আইন অনুসারে বণ্টন হবে।
প্রধান দুটি ভাগ (উত্তরাধিকারী)
১. প্রথমত শেয়ারারদের মধ্যে এবং পরবর্তীতে সম্পত্তি অবশিষ্ট থাকলে তা –
২. রেসিডুয়ারী বা আসাবার প্রার্থীদের মধ্যে বণ্টন করা হবে।
অংশীদার বা শেয়ারার
প্রথমত, ১২ জনকে অংশীদার বা শেয়ারার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরা হলেন মৃত ব্যক্তির স্বামী, স্ত্রী, বাবা, মা, দাদা, দাদী, বোন, কন্যা, পুত্রের কন্যা, বৈমাত্রেয় বোন, বৈপিত্রেয় ভাই এবং বৈপিত্রেয় বোন। নিম্নে তাদের প্রত্যেকের সম্পত্তির পরিমাণ এবং কোন অবস্থায় কেমন/ কতটুকুন পাবেন ও তার ব্যতিক্রম সহকারে উল্লেখ্য করা হলো।
- ১। স্বামীঃ যখন কোন বিবাহিত স্ত্রীলোক মারা যাবেন এবং তার কোন সন্তান থাকবে না কিংবা তার ছেলের কোন সন্তান থাকবে না তখন ঐ স্ত্রীলোকের স্বামী মোট সম্পত্তির ১/২ অংশ পাবেন। কিন্তু, যখন তার কোন সন্তান থাকবে কিংবা তার ছেলের কোন সন্তান থাকবে তখন স্বামী ১/৪ অংশ পাবে।
- ২। স্ত্রীঃ যখন কোন বিবাহিত পুরুষ মারা যাবেন এবং তার কোন সন্তান থাকবে না কিংবা তার ছেলের কোন সন্তান থাকবে না তখন ঐ লোকের স্ত্রী মোট সম্পত্তির ১/৪ অংশ পাবেন। কিন্তু, যখন কোন সন্তান থাকবে কিংবা ছেলের কোন সন্তান থাকবে তখন স্ত্রী ১/৮ অংশ পাবে। যদি ঐ লোকের একাধিক স্ত্রী থাকে, তখন তারা এক স্ত্রীর ন্যায় সম্পত্তি পাবে এবং তা নিজেদের মধ্যে সমান ভাগ করে নিবে। অর্থাৎ, এক স্ত্রী হলে যে সম্পত্তি পাওয়ার কথা একাধিক স্ত্রী হলেও তারা একই পরিমাণ সম্পত্তি পাবে এবং পরবর্তীতে ঐ সম্পত্তি তাদের নিজেদের মধ্যে সমান ভাগ হবে।
যেমন, যদি মৃত ব্যক্তির সন্তান থাকে তখন তার স্ত্রী ১/৮ অংশ পাবে; এখন তার দুই জন স্ত্রী হলে তারাও ১/৮ অংশ সম্পত্তি পাবে এবং তা নিজেদের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ করে নিবে। অর্থাৎ ১/৮ কে দুই ভাগ করলে দাঁড়ায় ১/১৬, প্রত্যেক স্ত্রী ১/১৬ অংশ করে পাবেন। - ৩। পিতাঃ যখন মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান থাকবে কিংবা মৃত ব্যক্তির ছেলের কোন সন্তান থাকবে, তখন মৃত ব্যক্তির পিতা মোট সম্পত্তির ১/৬ অংশ পাবেন। আবার, যখন মৃত ব্যক্তির কোন ছেলে থাকবে না কিংবা মৃত ব্যক্তির ছেলেরও কোন ছেলে থাকবে না, কিন্তু মৃত ব্যক্তির এক বা একাধিক মেয়ে থাকবে বা এক বা একাধিক ছেলের মেয়ে থাকবে, তখন মৃত ব্যক্তির পিতা শেয়ারার হিসেবে ১/৬ এবং আসাবা বা রেসিডুয়ারি হিসেবেও সম্পত্তি পাবেন যদি থাকে। কিন্তু, যখন মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান থাকবে না কিংবা মৃত ব্যক্তির ছেলেরও কোন সন্তান থাকবে না, তখন মৃত ব্যক্তির পিতা কেবল আসাবা সম্পত্তি পাবেন।
- ৪। দাদাঃ যখন মৃত ব্যক্তির পিতা জীবিত থাকবে না, তখন মৃত ব্যক্তির দাদা মৃত ব্যক্তির পিতার ন্যায় সম্পত্তি পাবেন। মনে রাখতে হবে, মৃত ব্যক্তির পিতা জীবিত অবস্থায় দাদা কোন মতেই সম্পত্তি পাবেন না।
- ৫। মাঃ যখন মৃত ব্যক্তির সন্তান বা মৃত ব্যক্তির পুত্রের সন্তান থাকবে বা মৃত ব্যক্তির দুই বা ততোধিক ভাই বোন থাকবে, তখন মৃত ব্যক্তির মা মোট সম্পত্তির ১/৬ অংশ পাবেন। কিন্তু, মৃত ব্যক্তির যখন কোন সন্তান থাকবে না কিংবা মৃত ব্যক্তির ছেলের কোন সন্তান থাকবে না বা ভাই বোনের সংখ্যা একের অধিক নয়, তখন মা ১/৩ অংশ পাবেন।আবার, যখন মৃত ব্যক্তির পিতা এবং স্বামী বা স্ত্রী জীবিত তখন স্বামী বা স্ত্রীকে দেওয়ার পর বাকী সম্পত্তির ১/৩ পাবেন। অর্থাৎ, যখন মৃত ব্যক্তির পিতা এবং তার জীবন সঙ্গিনী(মহিলা হলে স্বামী/পুরুষ হলে স্ত্রী) জীবিত থাকে, তখন আগে জীবন সঙ্গিনীকে সম্পত্তি দিতে হবে এবং তাকে দেওয়া পর যেই সম্পত্তি থাকবে তার ১/৩ মাকে দেওয়া হবে। মনে রাখতে হবে যে, মোট সম্পত্তির ১/৩ অংশ নয়, স্বামী বা স্ত্রীকে দেওয়ার পর বাকী সম্পত্তির ১/৩ অংশ।
- ৬। দাদী/নানীঃ শেয়ারার হিসেবে মৃত ব্যক্তির দাদী মোট সম্পত্তির ১/৬ অংশ পাবেন; কিন্তু শর্ত হচ্ছে মৃত ব্যক্তির মা অবশ্যই মৃত হতে হবে। মা জীবিত থাকলে পাবেন না। আবার, যদি মৃত ব্যক্তির পিতা জীবিত থাকে অর্থাৎ সম্পত্তি পেয়ে থাকেন তবে সেক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির দাদী সম্পত্তি না পেয়ে মৃত ব্যক্তির নানী পাবেন।
- ৭। কন্যা (মেয়ে) : যখন মৃত ব্যক্তির কোন পুত্র থাকবে না তখন মৃত ব্যক্তির কন্যা একজন হলে মোট সম্পত্তির ১/২ অংশ পাবেন; এর যদি একাধিক হয় তবে মোট সম্পত্তির ২/৩ অংশ পাবে। একাধিক বোনের ক্ষেত্রে প্রাপ্ত ২/৩ প্রত্যেকে সমান ভাগ পাবে।অনেক সময় অনেকে মনে করেন যে মায়ের সম্পত্তি মেয়েরা বেশি পায়। আসলে তেমন কোন বিষয় নেই। এটা একটা ভুল ধারনা মাত্র।
- ৮। পুত্রের কন্যাঃ যখন মৃত ব্যক্তির পুত্র, কন্যা এবং পুত্রের পুত্র থাকবে না, তখন পুত্রের কন্যা একজন হলে মোট সম্পত্তির ১/২ অংশ পাবেন; এর যদি একাধিক হয় তবে মোট সম্পত্তির ২/৩ অংশ পাবে। একাধিক পুত্রের কন্যার ক্ষেত্রে প্রাপ্ত ২/৩ প্রত্যেকে সমান ভাগ পাবে।ব্যতিক্রমঃ যদি মৃত ব্যক্তির কেবল একমাত্র কন্যা থাকে, তবে পুত্রের কন্যা (২/৩-১/২) ১/৬ অংশ পাবে।
- ৯। আপন বোনঃ যখন মৃত ব্যক্তির পুত্র, কন্যা, পুত্রের পুত্র, পুত্রের কন্যা, আপন ভাই, পিতা কেউই থাকবে না, তখন আপন বোন শেয়ারার হিসেবে সম্পত্তি পাবে। আপন বোন একজন হলে মোট সম্পত্তির ১/২ অংশ পাবেন; এর যদি একাধিক হয় তবে মোট সম্পত্তির ২/৩ অংশ পাবে। একাধিক আপন বোনের ক্ষেত্রে প্রাপ্ত ২/৩ প্রত্যেকে সমান ভাগ পাবে।
- ১০। বৈমাত্রেয় বোনঃ যখন মৃত ব্যক্তির পুত্র, কন্যা, পুত্রের পুত্র, পুত্রের কন্যা, আপন ভাই, আপন বোন, বৈমাত্রেয় ভাই, পিতা কেউই থাকবে না, তখন বৈমাত্রেয় বোন একজন হলে মোট সম্পত্তির ১/২ অংশ পাবেন; এর যদি একাধিক হয় তবে মোট সম্পত্তির ২/৩ অংশ পাবে। একাধিক আপন বোনের ক্ষেত্রে প্রাপ্ত ২/৩ প্রত্যেকে সমান ভাগ পাবে।ব্যতিক্রমঃ যদি কেবল একমাত্র আপন বোন থাকে, তবে বৈমাত্রেয় বোন (২/৩-১/২) ১/৬ অংশ পাবে।
- ১১। বৈপিত্রেয় ভাইঃ মৃত ব্যক্তির বৈপিত্রেয় ভাইও শেয়ারার হিসেবে সম্পত্তি পাবে এবং তার পরিমাণ ১/৬ অংশ। তবে কন্ডিশন হচ্ছে পিতা থেকে উপরে পূর্বপুরুষ কেউই থাকবে না এবং সন্তান থেকে উত্তরসূরি কেউই থাকবে না।
- ১২। বৈপিত্রেয় বোনঃ বৈপিত্রেয় বোন বৈপিত্রেয় ভাইয়ের ন্যায় সম্পত্তি পাবে। অর্থাৎ, ১/৬ অংশ এবং কন্ডিশন হচ্ছে পিতা থেকে উপরে পূর্বপুরুষ কেউই থাকবে না এবং সন্তান থেকে উত্তরসূরি কেউই থাকবে না।
একজন মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি তার শেয়ারারদের মধ্যে বণ্টনের পর যে সম্পত্তি অবশিষ্ট থাকবে, তা তার আসাবা লিস্টে যারা রয়েছে তাদের মধ্যে বণ্টন করা হবে। নিম্নে আসাবা লিস্ট দেওয়া হলঃআসাবা লিস্টকেও বংশধরের ভিত্তিতে চারটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে।
- ১। নিজের বংশধরঃ পুত্র, কন্যা
পুত্রের সন্তান থাকলে তারা, কন্যার সন্তান থাকলে তারা।
[পুত্র বা কন্যা অথ্যৎ তাদের দাদা বা নানার সম্পত্তি পাবেন যখন তাদের বাবা বা মা দাদা বা নানার আগেই মরা গিয়েছেন] এই নীতিকে প্রতিনিধিত্ব নীতি বলে যা মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশে ১৯৬১ এর ধারা ৪ বলে এসেছে। এই নীতিতে ধরে নেওয়া হয় যে তাদের বাবা বা মা বেচে থাকা অবস্থায় তাদের দাদা বা নানা মারা গিয়েছেন এবং তারপর তাদের বাবা বা মা মারা গিয়েছেন তাই তারা (বাবা বা মা)বেচে থাকলে যে অংশটা পেতেন তা সরাসরি তাদের কাছে চলে এসেছে।
- ২। পূর্ববর্তী বংশধরঃ পিতা, দাদা।
- ৩। পিতার বংশধরঃ ভাই, বোন, বৈমাত্রেয় বোন, বৈমাত্রেয় ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বৈমাত্রেয় ভাইয়ের ছেলে, বৈমাত্রেয় ভাইয়ের ছেলের ছেলে, ভাইয়ের ছেলের ছেলে।
- ৪। দাদার বংশধরঃ চাচা, বৈমাত্রেয় চাচা, চাচার ছেলে, বৈমাত্রেয় চাচার ছেলে, চাচার ছেলের ছেলে, বৈমাত্রেয় চাচার ছেলের ছেলে, আরো দূরবর্তী বংশধর।
উপরিউক্ত, আসাবা লিস্টের যেকোন একটি বংশধর সম্পত্তি পাবে। যদি নিজের বংশধরের কেউ বেঁচে থাকে তবে তারাই অবশিষ্ট বা আসাবা সম্পত্তি পাবে। যদি নিজের বংশধর বেঁচে না থাকে, তবে পূর্ববর্তী বংশধর সম্পত্তি পাবে। এই ভাবে উপর থেকে যেই বংশধর আগে থাকবে, তারাই মূলত আসাবা সম্পত্তি পাবে। এবং যত জন থাকবে তারা প্রত্যেকেই সমান ভাবে সম্পত্তি পাবে।
এই পর্যায়ে আপনার মনে প্রশ্ন উঠতে পারে যে পুত্র বা ছেলে সম্পত্তি আসলে কিভাবে বা কি হারে পাবে কারণ উপরে কোথাও এই বিষয়টি পরিষ্কার হয় নি। এজন্য দুটি কোরানিক আইন খুব ভাল ভাবে মনে রাখতে হবে।
- ১। মৃত ব্যক্তির পুত্র সব সময় তার কন্যার দ্বিগুণ পাবে; এটাকে আমরা গাণিতিক ভাবে সহজে বলতে পারি পুত্র (ভাই) দুই ভাগ পায় এবং কন্যা (বোন) এক ভাগ পায়। তাদের অনুপাত হবে, ২:১ ।
- ২। পুত্র থাকলে কন্যা পুত্রের সাথে রেসিডুয়ারী হিসেবে আনুপাতিক হারে পাবে।
এই হচ্ছে, মুসলিমের সম্পত্তি বণ্টন প্রক্রিয়া এবং উত্তরাধিকাররাও উপরিউক্ত প্রক্রিয়ানুসারে উত্তরাধিকার অর্জন করবে।
শেয়ার এবং আসাবার লিস্ট (চার্ট)
পাঠকের বুঝার সুবিধার্থে উপরিউক্ত শেয়ার এবং আসাবার লিস্ট সমূহ নিম্নে চার্ট আকারে দেওয়া হলঃ
মৃত্যু ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক | শেয়ারের অংশ | শর্ত |
স্বামী | ১/২ | যখন কোন সন্তান থাকবে না কিংবা ছেলের কোন সন্তান থাকবে না। |
১/৪ | যখন কোন সন্তান থাকবে কিংবা ছেলের কোন সন্তান থাকবে। | |
স্ত্রী(যদি স্ত্রী একের অধিক হয় তবে সকলে সমান ভাগ পাবে/ প্রাপ্ত সম্পত্তি ভাগ হয়ে যাবে) | ১/৪ | যখন কোন সন্তান থাকবে না কিংবা ছেলের কোন সন্তান থাকবে না। |
১/৮ | যখন কোন সন্তান থাকবে কিংবা ছেলের কোন সন্তান থাকবে। | |
পিতা | ১/৬ | যখন কোন সন্তান থাকবে কিংবা ছেলের কোন সন্তান থাকবে। |
১/৬ এবং রেসিডুয়ারী বা আসাবা | যখন কোন ছেলে থাকবে না কিংবা ছেলের কোন ছেলে থাকবে না, কিন্তু এক বা একাধিক মেয়ে থাকবে বা এক বা একাধিক ছেলের মেয়ে থাকবে। | |
রেসিডুইয়ারী বা আসাবা | যখন কোন সন্তান থাকবে না কিংবা ছেলের কোন সন্তান থাকবে না। | |
দাদা | ১/৬ | যখন কোন সন্তান থাকবে কিংবা ছেলের কোন সন্তান থাকবে কিন্তু পিতা থাকবে না এবং নিকটস্থ কোন দাদা থাকবে না। |
১/৬ এবং রেসিডুয়ারী বা আসাবা | যখন কোন ছেলে থাকবে না কিংবা ছেলের কোন ছেলে থাকবে না, কিন্তু এক বা একাধিক মেয়ে থাকবে বা এক বা একাধিক ছেলের মেয়ে থাকবে এবং পিতা ও নিকটস্থ কোন দাদা থাকবে না। | |
রেসিডুয়ারী বা আসাবা | যখন কোন সন্তান থাকবে না কিংবা ছেলের কোন সন্তান থাকবে না এবং পিতা ও নিকটস্থ কোন দাদা থাকবে না। | |
মা | ১/৬ | যখন সন্তান বা পুত্রের সন্তান থাকবে বা দুই বা ততোধিক ভাই বোন থাকবে। |
১/৩ | যখন কোন সন্তান থাকবে না কিংবা ছেলের কোন সন্তান থাকবে না বা ভাই বোনের সংখ্যা একের অধিক নয়। | |
স্বামী বা স্ত্রীকে দেওয়ার পর বাকী সম্পত্তির ১/৩ | যখন পিতা এবং স্বামী বা স্ত্রী জীবিত তখন স্বামী বা স্ত্রীকে দেওয়ার পর বাকী সম্পত্তির ১/৩ | |
দাদী | ১/৬ | মা থাকবে না। |
বিঃদ্রঃ যখন পিতা সম্পত্তি পাবে তখন দাদী সম্পত্তি পাবে না, তা চলে যাবে নানির কাছে। | ||
কন্যা | একজন হলে ১/২;একাধিক হলে ২/৩(প্রত্যেকে সমান ভাগ পাবে)
পুত্র থাকলে কন্যা পুত্রের সাথে রেসিডুয়ারী হিসেবে আনুপাতিক হারে পাবে। পুত্র : কন্যা = ২:১ অনুপাতে পাবে। [এই অনুপাতের সাথে পুত্র কন্যার সংখ্যা হিসেব করে অংশ বের করতে হবে। নিচে এ বিষয় দেখানো হোল] |
পুত্র থাকবে না। |
পুত্রের কন্যা | একজন হলে ১/২;একাধিক হলে ২/৩(প্রত্যেকে সমান ভাগ পাবে) | পুত্র, কন্যা এবং পুত্রের পুত্র থাকবে না। |
ব্যতিক্রমঃ যদি কেবল একমাত্র কন্যা থাকে, তবে পুত্রের কন্যা (২/৩-১/২) ১/৬ অংশ পাবে। | ||
আপন বোন | একজন হলে ১/২;একাধিক হলে ২/৩(প্রত্যেকে সমান ভাগ পাবে) | পুত্র, কন্যা, পুত্রের পুত্র, পুত্রের কন্যা, আপন ভাই, পিতা কেউই থাকবে না। |
বৈমাত্রেয় বোন | একজন হলে ১/২;একাধিক হলে ২/৩(প্রত্যেকে সমান ভাগ পাবে) | পুত্র, কন্যা, পুত্রের পুত্র, পুত্রের কন্যা, আপন ভাই, আপন বোন, বৈমাত্রেয় ভাই, পিতা কেউই থাকবে না। |
ব্যতিক্রমঃ যদি কেবল একমাত্র আপন বোন থাকে, তবে বৈমাত্রেয় বোন (২/৩-১/২) ১/৬ অংশ পাবে। | ||
বৈপিত্রেয় ভাই | একজন হলে ১/৬;একাধিক হলে ১/৩(প্রত্যেকে সমান ভাগ পাবে) | পিতা থেকে উপরে পূর্বপুরুষ কেউই থাকবে না এবং সন্তান থেকে উত্তরসূরি কেউই থাকবে না। |
বৈপিত্রেয় বোন | একজন হলে ১/৬;একাধিক হলে ১/৩(প্রত্যেকে সমান ভাগ পাবে) | পিতা থেকে উপরে পূর্বপুরুষ কেউই থাকবে না এবং সন্তান থেকে উত্তরসূরি কেউই থাকবে না। |
উপরিউক্ত প্রত্যেকটি সম্পর্কই (পিতা, মা, ভাই, বোন, স্বামী, স্ত্রী) মৃত্যু ব্যক্তির সম্পর্কিত। উপরিউক্ত শেয়ারের চার্ট অনুসারে সম্পত্তি বণ্টনের পর অবশিষ্ট সম্পত্তি যদি থাকে তাকে রেসিডুয়ারী বা আসাবা সম্পত্তি বলে। রেসিডুয়ারী বা আসাবা সম্পত্তি নিম্নক্ত লিস্ট অনুসারে বণ্টন করা হবে। নিম্নে রেসিডুয়ারী বা আসাবার চার্ট উল্লেখ্যঃ
রেসিডুয়ারী বা আসাবার
রেসিডুয়ারী বা আসাবার চার্ট
বংশধর | যারা পাবেন |
নিজের বংশধর | পুত্র, কন্যা,
পুত্রের সন্তান থাকলে তারা, কন্যার সন্তান থাকলে তারা। [পুত্র বা কন্য অর্থ্যৎ তাদের দাদা বা নানার সম্পত্তি পাবেন যখন তাদের বাবা বা মা দাদা বা নানার আগেই মরা গিয়েছেন]
|
পূর্ববর্তী বংশধর | পিতা/ দাদা |
পিতার বংশধর | ভাই, বোন, বৈমাত্রেয় বোন, বৈমাত্রেয ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বৈমাত্রেয় ভাইয়ের ছেলে, বৈমাত্রেয় ভাইয়ের ছেলের ছেলে, ভাইয়ের ছেলের ছেলে |
দাদার বংশধর | চাচা / বৈমাত্রেয় চাচা, চাচার ছেলে, বৈমাত্রেয় চাচার ছেলে, চাচার ছেলের ছেলে, বৈমাত্রেয় চাচার ছেলের ছেলে, আরো দূরবর্তী বংশধর। |
বিশেষ ভাবে মনে রাখতে হবে পুত্র থাকলে কন্যা রেসিডুয়ারী হিসেবে পাবে।
যারা কখনেই উত্তরাধিকার হতে বাদ যায় না।
মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে নিচের ৬ জন যদি জীবিত থাকে তবে তার কোন অবস্থায়ই উত্তরাধিকার হতে বাদ যায় না।
- ১. পিতা,
- ২. মাতা,
- ৩. স্বামী,
- ৪. স্ত্রী ,
- ৫. ছেলে,
- ৬. মেয়ে ।
উত্তরাধিকারী হয়েও সম্পত্তি পাবে না
জেনে রাখা ভালো, কোন উত্তরাধিকারীকে সাধারণত সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা যায় না। যেমন ইসলাম ধর্মে ত্যাজ্য করা যায় না, কেউ কেউ মুখ করলেও তার আইনগত কোন ভিত্তি নেই। তাই ত্যাজ্য করলেও সম্পত্তি পাবে। অন্যদিকে ইসলামে এডাপশন বা পালক পুত্র বলে [আইনগত ভাবে] কিছু নেই তাই তেমন কেউ থেকে থাকলে সে স্বাভাবিক ভাবে সম্পত্তি পাবে না। তাকে বিশেষ ভাবে উইল বা দান করতে হবে।
কিন্তু কিছু ব্যতিক্রম আছে যখন কেউ সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। যেমন, যদি তিনি যার কাছ থেকে সম্পত্তি পাবেন তাকে খুন করেন কিংবা ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করেন বা বিশেষ বিবাহ আইনে বিবাহ করেন।
গানিতিক সমস্যা ও সমাধান
মুসলিম উত্তরাধিকার হিসেব (অংক) অনেক জটিল হতে পারে তবে প্রকটিক্যাল্যি তা হয় না, তাই বোঝার সার্থে আমার একটি সাধারন হিসেব করি।
সমস্যা:
ধরি, ‘ক’ একজন মুসিলিম পুরুষ ১০০০০০ টাকার সম্পত্তি রেখে মারা গেছেন। মৃত্যুর পুর্বে তিনি একজনকে ৫০০০০ টাকা দান করেছেন (কিন্তু সেটা তার হাতে তুলে দিতে পারেন নি) তার এক আত্বীয়কে ৫০০০০ টাকা উইল করেছেন। এবং তার স্ত্রীর দেন মোহর (১ লক্ষ টাকা) পরিশোধ না করেই তিনি মারা গেছে। অন্যদিকে আর মৃত্যুর পর তার সৎকার কর্মে তার পরিবার ৫০০০০ টাকা খরচ করেছেন।
‘ক’ তার ১ স্ত্রী, ১ পুত্র, ২ কন্যা রেখে মারা গিয়েছেন। এদের মধ্যে কিভাবে সম্পত্তি বন্টন হবে?
সমাধান:
১. প্রথমে সব দেনা পাওনা/ উইল / দান এবং সৎকার খরচ বাদ দিতে হবে
অতএব মোট সম্পত্তি থেকে বাদ গিয়ে থাকে,
১০০০০০০ – ( ৫০০০০ + ৫০০০০ +৫০০০০ + ১০০০০০)
= ১০০০০০০ – ২৫০০০০
= ৭৫০০০০ টাকা
২. এবার যেই টাকাটা থাকে তা প্রথমে শেয়ারারদের মধ্যে অংশ হরে ভাগ হবে ভাগ হবে।
এখানে একমাত্র শেয়ারার আছেন তার স্ত্রী (যেহেতু পুত্র থাকার কারনে কন্যা রেসিডুয়ারী হিসেবে গন্য হবে )
তার স্ত্রী পাবেন ১/৮ অংশ; বা ৭৫০০০০ এর ১/৮ অংশ = ৯৩৭৫০ টাক।
৩. এখন বাদ-বাকি অংশ রেসিডুয়ারীদের মধ্যে ভাগ হবে,
যেখানে আছেন ১ পুত্র এবং ২ কন্য; সুত্র মতে পুত্রের অর্ধেক পাবে বোন। অতএব, বলা যায়। পুত্র: কন্যা = ২: ১।
এখানে যেহেতু, ১ পুত্র = ২*১ = ২ এবং;
দুই কন্যা = ১*২ = ২
তাহলে মোট ভাগ দাড়ায়, ২+ ২ = ৪, তাই বাকি সম্পত্তি ( ৭৫০০০০ – ৯৩৭৫০ = ৬৫৬২৫০) ৬৫৬২৫০ টিকে প্রথমে ৪ ভাগ করতে হবে, যা করলে দাড়ায় ১৬৪০৬২.৫ টাকা। এই ৪ ভাগের দুই ভাগে পাবেন ভাই ( ১৬৪০৬৫.২ *২ = ৩২৮১২৫) ৩২৮১২৫ টাকা পাবেন পুত্র / ভাই আর দুই বোন পাবেন এক ভাগ করে যাথাক্রম, প্রথম বোন , ১৬৪০৬৫.২ এবং দ্বিতীয় বোন, ১৬৪০৬৫.২।
আপনাদের সুবিধার্থে সহজে হিসেবের জন্য একটি উত্তরাধিকার ক্যলকুলেটারের লিংক দেওয়া হল যার মাধ্যমে খুব সহজেই আপনি জটিল হিসেব করতে পারবেন: এই লিংকে ক্লিক করুন
উত্তরাধিকারের দাবি অনুসারে সঠিক ভাবে অর্থ এবং সম্পদ পেতে হলে আগে ওয়ারিশ সনদ গ্রহন করতে হয়। তারপর নিজেরা বসে ভাগ বাটোয়ার করে বিষয় সম্পত্তি বুঝে নিতে হয়। যদি সবার মতে না মিলে তখন দেওয়ানি আদালতে বন্টনের মামলা করার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করতে হয়।
পোস্ট ক্রেডিটঃ https://bangla.lawhelpbd.com