জরিপ কার্যক্রমের বিভিন্ন স্তর

১। বিজ্ঞপ্তি প্রচারঃ

ভূমি জরিপ আরম্ভের পূর্বে ১৯৫০ সনের বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইনের ১৪৪(১) ধারা এবং বঙ্গীয় জরিপ আইনের ৩ ধারায় ক্ষমতা প্রাপ্ত হয়ে সেটেলমেন্ট অফিসার কর্তৃক ৫ ও ৭ ধারার নোটিশ প্রদান। জরিপ শুরুর পূর্বে মাইকিং ও পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিসহ ব্যাপক জনসংযোগ করা হয়। এসময় ভূমি মালিকগণকে নিজ নিজ জমির আইল/ সীমানা চিহ্নিত করে রাখতে হবে। জমির মালিকানার সমস্ত দলিল/ কাগজপত্র হালনাগাদ অবস্থায় কাছে রাখতে হবে।

২। ট্রাভার্সঃ

কোন মৌজার নকশা সম্পূর্ণ নতুন করে প্রস্তুত করতে মৌজায় যে কাঠামো স্থাপন করা হয় সেটাই ট্রাভার্স। অতঃপর পি-৭০ সিটের মাধ্যমে মৌজার নতুন নকশা প্রস্ত্তত করা হয়। কোন মৌজার পুরোনো নকশা অর্থাৎ ব্লু-প্রিন্ট সিটের উপর জরিপ করার ক্ষেত্রে ট্রাভার্স করা হয় না। ট্রাভার্স পরিচালনা করেন একজন সার্ভেয়ারের নেতৃত্বে একদল জরিপ কর্মচারী।

৩। কিস্তোয়ারঃ

এই স্তরে আমিন দল প্রতি খন্ড জমির পরিমাপ করে তা মৌজার নকশায় প্রতিফলিত করে নতুন নকশা অংকনের মাধ্যমে কিস্তোয়ার সম্পন্ন করে অথবা ব্লু-প্রিন্টে পুরোনো নকশা সংশোধন করেন।

৪। খানাপুরীঃ

কিস্তোয়ার স্তরে অঙ্কিত নকশার প্রত্যেকটি দাগের জমিতে উপস্থিত হয়ে আমিনদল জমির দাগ নম্বর প্রদান করেন এবং মালিকের রেকর্ড, দলিলপত্র ও দখল যাচাই করে মালিকের নাম, ঠিকানা ও অন্যান্য তথ্য খতিয়ানে লিপিবদ্ধ (খানাপুরী) করেন। এ স্তরে ভূমি মালিকদের কাজ হচ্ছে আমিনদলকে জমির মালিকানা ও দখল সংক্রান্ত প্রমাণাদি উপস্থাপন করা।

৫। বুঝারতঃ

বুঝারত অর্থ জমি বুঝিয়ে দেয়া। এ স্তরে আমিনদল কর্তৃক প্রস্তুতকৃত খাতিয়ান বা পর্চা জমির মালিককে সরবরাহ (বুঝারত) করা হয়, যা মাঠ পর্চা নামে পরিচিত। পর্চা বিতরণের তারিখ নোটিশ/ পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রচার/ এলাকায় মাইকিং এর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়। ভূমি মালিকগণ প্রাপ্ত পর্চার সঠিকতা যাচাই করে কোনরূপ সংশোধন বা পরিবর্তন আবশ্যক হলে নির্দিষ্ট (Dispute) ফরম পূরণ করে তা আমিনের নিকট জমা দেবেন। একজন উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার (কানুনগো) হল্কা অফিসার হিসাবে সংশ্লিষ্ট পক্ষগণের শুনানির মাধ্যমে দ্রুত ঐসকল বিবাদ নিষ্পত্তি করবেন।

৬। খানাপুরী ও বুঝারতঃ

যখন কোন মৌজা ট্রাভার্স এবং কিস্তোয়ারের মাধ্যমে ব্লু-প্রিন্ট সীটে জরিপ করা হয় সে সময় উপরে বর্ণিত খানাপুরী ও বুঝারত স্তরের কাজ একসাথে করা হয়। সরদার আমিন/হল্কা অফিসার বা কানুনগো/ক্যাডাস্ট্রাল সার্কেল অফিসার।

৭। তসদিক বা এটাস্টেশন :

ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে তসদিক স্তরের কাজ সম্পাদিত হয়। তসদিক স্তরের কাজ সম্পাদন করেন একজন কানুনগো বা রাজস্ব অফিসার। জমির মালিকানা সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র ও প্রমাণাদি যাচাই করে প্রতিটি বুঝারত খতিয়ান সত্যায়ন করা হয়। এ স্তরেও ভূমি মালিকগণ পর্চা ও নকশার কোন সংশোধন প্রয়োজন মনে করলে বিবাদ (Dispute) দাখিল করতে পারেন এবং উপযুক্ত প্রমান উপস্থাপন করে তা সংশোধনের সুযোগ নিতে পারেন। তসদিককৃত পর্চা জমির মালিকানায় প্রাথমিক আইনগত ভিত্তি (Primary Legal Document) হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই এ স্তরের কাজটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৮। খসড়া প্রকাশনা (ডিপি) ও আপত্তি দায়েরঃ

তসদিকের পর জমির প্রণীত রেকর্ড সর্ব সাধারণের প্রদর্শনের জন্য ৩০ দিন উম্মুক্ত রাখা হয়। এর সময়কাল উল্লেখপূর্বক ক্যাম্প অফিস হতে বিজ্ঞপ্তিও প্রচার করা হয়। ভূমি মালিকগণের নামের অদ্যাক্ষর অনুযায়ী খতিয়ান বা পর্চা বর্ণনাক্রমিক ক্রমবিন্যাস করে খতিয়ানে নতুন নম্বর দেওয়া হয়। ডিপি নম্বরটি সংগ্রহের জন্য ভূমি মালিকগণকে নিজ নিজ পর্চাসহ খসড়া প্রকাশনা (ডিপি) ক্যাম্পে উপস্থিত হতে হয়। ডিপিতে প্রকাশিত খতিয়ান সম্পর্কে কারো কোন আপত্তি বা দাবি থাকলে সরকার ১০ (দশ) টাকার কোর্ট ফি দিয়ে নির্দিষ্ট ফরম পূরণের মাধ্যমে প্রজাস্বত্ব বিধিমালার ৩০ বিধি অনুযায়ী আপত্তি দায়ের করা যাবে।

৯। আপত্তি শুনানীঃ

ডিপি চলাকালে গৃহীত আপত্তি মামলাসমূহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগণকে নোটিশ মারফত জ্ঞাত করে নির্দিষ্ট তারিখ, সময় ও স্থানে শুনানী গ্রহন করে নিস্পত্তি করা হয়। পক্ষগণ নিজে অথবা মনোনীত প্রতিনিধির মাধ্যমে নিজ নিজ দাবি আপত্তি অফিসারের নিকট উপস্থাপন করতে পারেন। আপত্তি অফিসার পক্ষগণকে শুনানী দিয়ে, রায় কেস নথিতে লিপিবদ্ধ করে তার সিদ্ধান্ত জানাবেন এবং সিদ্ধান্তের আলোকে খতিয়ান বা রেকর্ড প্রয়োজনীয় সংশোধন আনবেন।

১০। আপীল শুনানীঃ

আপত্তির রায়ে সংক্ষুদ্ধ পক্ষ ৩১ বিধিতে আপীল দায়ের করতে পারেন। নির্ধারিত কোর্ট ফি এবং কার্টিজ পেপারসহ সেটেলমেন্ট অফিসার বরাবর আবেদন দাখিলের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট আপত্তি মামলার রায়ের ঐ নকলসহ আপীল দায়ের করতে হবে। সংশ্লিষ্ট পক্ষকে নোটিশ মারফত জ্ঞাত করে নির্দিষ্ট তারিখ, সময় ও স্থানে শুনানী গ্রহন করে আপীল নিস্পত্তি করা হয়।

১১। চূড়ান্ত যাচাইঃ

আপিল শুনানী সমাপ্ত হওয়ার পর মৌজার খতিয়ান ও নকশা চূড়ান্তভাবে পরীক্ষা করে খতিয়ানের ফেয়ার কপি সীটের কালিকরণের কাজ সমাপ্ত করা হয়।

১২। চূড়ান্ত প্রকাশনাঃ

খতিয়ান ও নকশা মুদ্রণের পর রেকর্ডের চূড়ান্ত প্রকাশনা দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে কোন কাগজপত্র প্রয়োজন হয় না। শুধুমাত্র সরকার নির্ধারিত প্রতিটি মুদ্রিত খতিয়ান ৬০ টাকা এবং প্রতিটি মুদ্রিত নক্সা ৩৫০ টাকা জমা দিয়ে সংশ্লিষ্ট অফিস হতে সংগ্রহ করা যায়।


সর্বশেষ হালনাগাদঃ সেপ্টেম্বর ২১, ২০২২