রেজিস্ট্রেশন (সংশোধন) আইন, ২০০৪

ভূমি বিষয়ে দেওয়ানী ও ফৌজদারী বিরোধ, মামলা মোকদ্দমা, প্রতারণা, হয়রানী, জালিয়াতি ইত্যাদি লাঘব এবং ভূমি হস্তান্তরের স্বচ্ছতা আনয়ণের লক্ষ্যে সম্পত্তি বাংলাদেশ সরকার রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯০৮ সংশোধন এবং ভূমি হস্তান্তর আইন, ১৮৮২ সংশোধন করেছেন।

রেজিস্ট্রেশন আইনের উল্লেখযোগ্য সংশোধনীসমূহ নিম্নরূপঃ

১. ধর্মীয় বিধান মোতাবেক মৌখিক হেবা আইনসিদ্ধ। তবে হেবার প্রমাণ সুরক্ষা করার জন্য পরে হেবা সম্পর্কে একটি ঘোষণামূলক দলিল বা হলফনামা রেজিস্ট্রি করতে হবে [ধারা ১৭ (১)(কক)]। মুসলিম আইন অনুসারে স্বামী-স্ত্রী, পিতা-মাতা ও সন্তানাদি, দাদা-দাদী/নানা-নানী ও নাতি-নাতনী কিংবা আপন ভাই-বোনদের মধ্যে হেবা হলে উহার ঘোষনামূলক দলিল/হলফনামা মাত্র ১০০ টাকা ফি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা যাবে।

২. কোন ব্যাংক হতে ঋণ গ্রহণ করতে হলে বন্ধকী দলিল রেজিস্ট্রি করতে হবে [ধারা ১৭এ (১)]। বন্ধক উদ্ধার (Redemption) না করে অথবা বন্ধক গ্রহীতার লিখিত সম্মতি ছাড়া ঐ জমি অন্যত্র যে কোন প্রকার হস্তান্তর বেআইনী হবে [ধারা ৫৩ডি, সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, ১৮৮২]। বন্ধকী দলিলে রেজিস্ট্রশন ফি পূর্বের তুলনায় অনেক হ্রাস করা হয়েছে।

৩. ওয়ারিশসুত্রে প্রাপ্ত এজমালী সম্পত্তি বাটোয়ারা করার ক্ষেত্রে দলিল করা বাধ্যতামূলক নয়। তবে বাটোয়ারা লিখিতভাবে দলিলের মাধ্যমে সম্পাদন করলে রেজিস্ট্রি করতে হবে [ধারা ১৭ (১)(চ)]।

৪. স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয়ের চুক্তিপত্র অবশ্যই লিখিত এবং রেজিস্ট্রিকৃত হতে হবে [ধারা ১৭এ (১)]। বিক্রয় চুক্তি/বায়না চুক্তি সম্পাদনের তারিখ হতে ৩০ দিনের মধ্যে রেজিস্ট্রির জন্য দাখিল করতে হবে [ধারা ১৭এ (২)]। পূর্বে যে সকল বায়না হয়েছে কিন্তু রেজিস্ট্রি হয়নি সেগুলি ১লা জানুয়ারী ২০০৬ তারিখের মধ্যে রেজিস্ট্রি করতে হবে অথবা মূল সাফ কবলা দলিল রেজিস্ট্রি করে নিতে হবে। অন্যথায় ঐ বায়না অকার্যকর হয়ে যাবে [ধারা ১৭খ]। বায়না চুক্তি বলবৎ থাকাকালীন উক্ত একই জমি অন্যত্র যেকোন প্রকার হস্তান্তর বেআইনী হবে [ধারা ৫৩খ, সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, ১৮৮২]।

৫. সাফ কবলা দান, হেবা এবং হেবার ঘোষণাপত্র দলিল সারা দেশে একই পদ্ধতিতে লেখার সুবিধার্থে একটি সহজ ফরমেট নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্ধারিত ফরমেটে ঐ সকল দলিল লেখা ১লা অক্টোবর ২০০৫ থেকে বাধ্যতামূলক [ধারা ২২এ (৩)]।

৬. স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে উক্ত সম্পত্তির খতিয়ান দলিল দাতার নামে হতে হবে। তবে মালিকানা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হলে দাতার পুর্ব পরুষের নামে খতিয়ান থাকলেও চলবে। [ধারা ৫২এ]।

৭. রেজিস্ট্রেশনের সময় দলিলে দাতা এবং গ্রহীতা উভয়ের ছবি সংযুক্ত করতে হবে, উক্ত ছবি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির স্বাক্ষর/বাম বৃদ্ধাঙ্গুলীর টিপসইযুক্ত হবে [ধারা ২২এ(২)]।

৮. দলিল রেজিস্ট্রির সময় সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গ্রহীতার উপস্থিতি বাধ্যতামূলক নয়। দলিলে গ্রহীতার দস্তখত এবং ছবি সাব-রেজিস্ট্রারের সম্মুখে দিতে হবে না। গ্রহীতার ছবি এবং দস্তখত দলিলে থাকলেই গ্রহণযোগ্য হবে। [ধারা ২২এ(২)]।

৯. জমি রেজিস্ট্রির সময় ক্রেতা বা বিক্রেতাকে দলিল লেখক কর্তৃক সনাক্ত করতে হবে না।

১০. প্রবাসী কোন নাগরিক দেশে উপস্থিত না থাকলে প্রচলিত নিয়মে নিবন্ধিত আম-মোক্তারনামার মাধ্যমে দলিল রেজিস্ট্রি সম্পন্ন করতে পারবেন।

১১. আদালত কর্তৃক ডিক্রিপ্রাপ্ত বা নিলামে ক্রয়কৃত স্থাবর সম্পত্তির জন্য ২৫ বছরের মালিকানার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস প্রয়োজন হবে না।

১২. বায়নাপত্র, ব্যাংকের অনুকূলে বন্ধক, নির্ধারিত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে হেবার ঘোষণা দলিল/হলফনামা রেজিস্ট্রেশনের জন্য নগণ্য ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।

১৩. ওয়াকফ্ দলিল, বন্টননামা দলিল ও নাদাবি দলিলে নতুন কোন ফি ধার্য করা হয়নি।

১৪. দলিল সম্পাদনের ৩ মাসের মধ্যে তা রেজিস্ট্রেশনের জন্য দলিল করতে হবে (যা পূর্বে ছিল ৪ মাস) [ধারা ২৩]।

The Registration (Amendment) Act, 2004 ডাউনলোড করার জন্য ভিজিট করুনঃ
www.dolil.com/gazettes/the-registration-amendment-act-2004/


সর্বশেষ হালনাগাদঃ ফেব্রুয়ারী ৯, ২০২৪